ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

জেলায় শিক্ষার্থীদের গাইড কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে

gaid bookকক্সবাজার প্রতিনিধি ::

শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ভর্তি আর শিক্ষা উপকরনে নানান ভাবে শোষণ করার পর এবার গাইউ বই কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। ১ম  শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিটি বিষয়ের গাইউ বই কিনতে চাপ দিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। আবার অনেক কোচিং শিক্ষকরাও গাইড বই কিনতে বাধ্য করছে। আর বই কিনতে হবে স্কুল বা শিক্ষকের পছন্দ মত লাইব্রেরি থেকে। অভিভাবকদের দাবী প্রকাশনা সংস্থা থেকে নির্দিষ্ট কমিশন পাওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের উপর বাড়তি গাইড বইয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আর এতে চরম আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অভিভাবকরা।
কক্সবাজার সদর উপজেলার হাজী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রীর অভিভাবক আলী আহাম্মদ বলেন, কয়েকদিন ধরে আমার মেয়ে বিরক্ত করছে গাইড বই কিনে দেওয়ার জন্য, সরকারিভাবে গাইড বই নিষিদ্ধ হলেও সরকারি স্কুলে গাইড বই কেন ? পরে বাধ্য হয়ে ৭০০ টাকা দিয়ে গাইড বই কিনে দিয়েছি।
কক্সবাজার সাহিত্যিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ২ ছাত্রী বলেন স্কুল থেকে আমার ক্লাস শিক্ষক গাইড বই কিনতে বলেছে, উনারা আমাদের ঠিক করে দিয়েছে একটি নির্দিষ্ট লাইব্রেরি, সেখান থেকেই কিনতে বলেছে। ইতি মধ্যে অনেকে গাইড বই কিনেছে। আমরা না কিনার কারনে আমাদের ক্লাসে বকাঝকা করেছে। স্কুলের বেশির ভাগ ক্লাসে শিক্ষকরা ছাত্র-ছাত্রীদের গাইড বই কিনতে বাধ্য করছে বলে জানিয়ে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন আমরা জানতে পেরেছি কিছু প্রকাশনি সংস্থা শিক্ষকদের কমিশন দিয়ে তাদের গাইড বই বিক্রি করতে বলেছে তাই তারা আমাদের চাপ দিচ্ছে।
২৫ জানুয়ারি শহরের লালদিঘীর পাড় এলাকার বুক ভিলা নামক লাইব্রেরি গিয়ে  বায়তুশ শরফ উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী গাইড বই কিনা অবস্থায় আলাপ কালে তারা বলেন, আমরা যে বিপদে আছি বলে বুঝাতে পারবো না। ভর্তি হতেই অভিবাবকদের লেজেগুবরে অবস্থা হয়ে গেছে এর পর স্কুল ড্রেসসহ অন্যান্য খরচ যোগাতে আমাদের নি¤œ মধ্য বিত্ত পরিবারের বাবাদের যে কি হাল হয়েছে সেটা আমরাই জানি। এখন স্কুল থেকে বার বার চাপ দিচ্ছে বিভিন্ন বিষয়ের উপর গাইড বই কিনতে। খবর নিয়ে দেখি প্রতিটি গ্ইাড বই সাধারণ দামের চেয়ে অনেক চড়া দামে বিক্রি করছে। পরে আমরা পাশের বাড়ির এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পপি গাইড বই কিনে স্কুলে নিয়ে গেলে ক্লাস শিক্ষক বলেছে সেটা হবে না। উনাদের নির্দিষ্ট অনুপম গাইড কিনতে হবে, সমস্যার এখানে শেষ নেই আমরা যে শিক্ষকের কাছে কোচিং করি তিনি কড়া ভাবে বলে দিয়েছে লেকচার গাইড কিনতে। তাহলে এবার আপনারাই বলুন আমরা কি করি। মোট কথা শিক্ষার্থীরা এখন টাকার মেশিন, কোন কোন ভাবে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করাই হচ্ছে কাজ। এ সময় বুক ভিলা লাইব্রেরির এক কর্মচারীর সাথে পরিচয় গোপন রেখে কথা প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের লাইব্রেরির মালিক সমিতির নেতা, তাই এখানে গাইড অবাধে বিক্রি করলেও কোন সমস্য নেই। আর এখানে কমপক্ষে ১২/১৫ টি স্কুলের সাথে চুক্তি আছে সে হিসাবে আমাদের ব্যবসা ভাল।
এদিকে শহরের রক্ষিত মার্কেটের বেশ কয়েকটি লাইব্রেরি খুব জোরেশুরে বিক্রি করছে গাইড বই। সেখানেও কয়েক জন শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে তারাও বাধ্য হয়ে গাইড বই কিনতে এসেছে। এ সময় শহরের রুমালিয়ার ছড়া এলাকার ছাত্রীর অভিভাবক সেলিনা আকতার বলেন, আমার  ৩ ছেলে মেয়ে লেখাপড়া করে তাদের ভর্তি আর আনুষাঙ্গিক খরচ দিতে আমাকে নিঃস্ব হতে হয়েছে। এখন তারা বিরক্ত করছে গাইড কিনে দিতে, তাই বাধ্য হয়ে গাইড কিনতে এসেছি। আর প্রতিটি গাইড কিনতে গিয়ে দেখছি দাম চড়া। আর স্কুল থেকে নির্দিষ্ট করে দেওয়া লাইব্রেরি থেকে কিনতে বলে দিয়েছে তাই সেখান থেকে কিনতে হচ্ছে। এটা খুবই অন্যায়। আমাদের মত নি¤œবিত্ত পরিবারের জন্য এটা অনেক বড় বোঝা। এ সময় উপস্থিত বেশ কয়েক জন অভিভাবক বলেন, মূলত শিক্ষকরা তাদের কমিশনের জন্য জোর করে গাইড কিনতে বাধ্য করছে। আবার অনেক সময় নামকরা গাইড থাকলেও তারা যে প্রকাশনি থেকে কমিশন নিয়েছে তাদের গাইড ছাড়া গ্রহন করে না।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক নাছির উদ্দিন বলেন, সরকারিভাবে গাইড বই নিষিদ্ধ, যদি কোন শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের তাদের পছন্দ মত গাইড বই কিনতে চাপ দেয় সেটা খুবই অন্যায়। মূলত শিক্ষার্থীরা অনেক সময় সহায়তার জন্য গাইড বই ব্যবহার করে সেটা একান্তই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার।
আলাপ কালে কক্সবাজার সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর ফজলুল করিম বলেন, সরকার শিক্ষার্থীদের মেধা বিকাশের জন্য সৃজনশীল পদ্ধতি করেছে সেখানে যদি গাইড বই দিয়ে পড়ানো হয় তাহলে সৃজনশীলের আর কি থাকলো। মূলত কিছু প্রকাশনি সংস্থা মোটা কমিশন দিয়ে এই অনৈতিক কাজ করছে। তবে আমরাও জানি অনেকে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে নির্দিষ্ট করা গাইড বই কিনতে। সে ক্ষেত্রে সবার আগে শিক্ষকদের এগিয়ে আসতে হবে।

পাঠকের মতামত: